ঢাকা, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

শেয়ার কারসাজি করতে অতিরঞ্জিত ইপিএস দেখিয়েছে লাভেলো

২০২৫ জুন ২৮ ১১:০৩:৪১
শেয়ার কারসাজি করতে অতিরঞ্জিত ইপিএস দেখিয়েছে লাভেলো

শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ানো হচ্ছে লাভেলো আইসক্রীমের। এক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সরাসরি যোগসাজোশ রয়েছে। তারা সেকেন্ডারিতে বেনামে শেয়ার কিনে যেমন কৃত্রিম চাহিদা বাড়িয়েছে, একইভাবে আর্থিক হিসাবে অতিরঞ্জিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখিয়ে সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করার অপচেষ্টা করেছে। তারপরেও রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন এখনো কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজি উল্লেখ করার মতো কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ তিনি শাস্তি প্রদানে এরইমধ্যে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। যিনি বিভিন্ন কোম্পানির অনিয়মে কয়েক হাজার কোটি টাকার জরিমানা করেছেন। একইভাবে লাভেলোর শেয়ার কারসাজি নিয়ে তদন্ত করলেও অনেক শাস্তি প্রদানের মতো উপাদান তিনি পাবেন।

লাভেলো কর্তৃপক্ষ ইপিএস বেশি দেখাতে অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ হিসাব মান লঙ্ঘন করে বোনাস শেয়ারকে ওয়েট করে ইপিএস গণনা করেছে। এরমাধ্যমে চলতি অর্থবছরের ৬ মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪) ব্যবসায় ১.৩৮ টাকার ইপিএসকে ১.৫২ টাকা দেখিয়েছে লাভেলো কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে ০.১৪ টাকা ইপিএস বেশি দেখানো হয়েছে।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ওবায়দুর রহমান স্টক সংবাদকে বলেন, আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৩৩ অনুযায়ি বোনাস শেয়ারকে ওয়েট করে ইপিএস গণনার কোন সুযোগ নেই। কেউ যদি বোনাস শেয়ারকে ওয়েট করে ইপিএস গণনা করে, তাহলে সেটা অতিরঞ্জিত করে ইপিএস দেখানো হবে। এছাড়া হিসাব মানে ইপিএস ও শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ গণনা একইভাবে করার নিয়ম রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বিএসইসির এক কর্মকর্তা স্টক সংবাদকে বলেন, হিসাব মানে বোনাস শেয়ারকে ওয়েট করে ইপিএস দেখানোর সুযোগ নেই। কেউ যদি এটা করে থাকে, তাহলে সেটা বড় অনিয়ম। আপনারা গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ তুলে ধরেন। এরপরে বিষয়টি কমিশনের দৃষ্টিতে এনে কোম্পানিকে শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করার সব উদ্যোগ নেব।

আরও পড়ুন.....

লাভেলোর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি

কারসাজির লাভেলো আইসক্রীমের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি

লাভেলোর নামে ঋণ নিয়ে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে অর্থ পাচার

বিএসইসির চোখের সামনে লাভেলোর প্রতারণা : এখনো নিশ্চুপ মাকসুদ কমিশন

জানা গেছে, লাভেলোর চলতি অর্থবছরের শুরুতে ৮.৫০ কোটি শেয়ার ছিল। এর উপরে ১০% হারে ৮৫ লাখ বোনাস শেয়ার দিয়েছে। এতে করে মোট শেয়ার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯.৩৫ কোটি শেয়ার। আর কোম্পানিটির ৬ মাসে নিট মুনাফা হয়েছে ১২,৯২,৫৯,৫৪০ টাকা। এ হিসাবে আইএএস-৩৩ অনুযায়ি শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয় ১.৩৮ টাকা (১২,৯২,৫৯,৫৪০/৯,৩৫,০০০০০)।

কিন্তু এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অতিরঞ্জিত ইপিএস দেখানোর জন্য বোনাস শেয়ারকে ওয়েট করেছে। এক্ষেত্রে তারা ১২,৯২,৫৯,৫৪০ টাকার নিট মুনাফাকে ৮,৫০,৯২,৩৯১টি শেয়ার দিয়ে ভাগ করে ১.৫২ টাকা ইপিএস দেখিয়েছে।

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ একইভাবে চলতি অর্থবছরের ২য় প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৪) নিট মুনাফাকে বোনাস শেয়ারের ওয়েটেড করে ৮,৫০,৯২,৩৯১টি শেয়ার দিয়ে ইপিএস দেখিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা ওই সময়ের ৫২২০৫০২৫ টাকার নিট মুনাফাকে ইপিএস হিসেবে দেখিয়েছে ০.৬১ টাকা। অথচ আইএএস-৩৩ অনুযায়ি, ওইসময় ৯,৩৫,০০০০০টি শেয়ার বিবেচনায় ইপিএস হয়েছে ০.৫৬ টাকা। এক্ষেত্রে ০.০৫ টাকা বেশি ইপিএস দেখানো হয়েছে।

অথচ এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষই শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) হিসাবে ৯.৩৫ কোটি শেয়ারকেই বিবেচনায় নিয়েছে। কিন্তু হিসাব মান অনুযায়ি ইপিএস ও এনওসিএফপিএস একই পদ্ধতিতে হিসাব করতে হয়। তারা হিসাব মান অনুযায়ি বোনাস শেয়ারকে ওয়েট না করে এনওসিএফপিএস দেখিয়েছে। কিন্তু যেটা দেখে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হয়, সেই ইপিএস বেশি দেখানোর জন্য হিসাব মান অনুসরন করেনি।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে