ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

বিএসইসিকে তদন্তের আহবান

কারসাজিকে একরামুলের শৈল্পিক রূপদান : প্রথমার্ধের কৃত্রিম মুনাফাকে শেষার্ধে সমন্বয়

২০২৫ নভেম্বর ০৪ ০৮:৫৬:৫৭
কারসাজিকে একরামুলের শৈল্পিক রূপদান : প্রথমার্ধের কৃত্রিম মুনাফাকে শেষার্ধে সমন্বয়

শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা করার জন্য কারসাজিকে শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে লাভেলো আইসক্রীমের কর্ণধার এমডি একরামুল হক। এ করতে গিয়ে প্রান্তিক বা কোয়ার্টারলি আর্থিক হিসাবে নিজেদের মতো করে প্রকাশ করেছে। কারসাজির স্বার্থে প্রয়োজন মতো বাড়িয়ে মুনাফা ও ইপিএস দেখিয়েছে। তবে বছর শেষে নিরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক হওয়ায় আগের দেখানো কৃত্রিম মুনাফাকে বার্ষিক প্রতিবেদনে সমন্বয় করতে হয়েছে। এ কারনে বছরের প্রথম প্রান্তিকে অস্বাভাবিক মুনাফা করা কোম্পানির শেষ প্রান্তিকে লোকসানের তথ্য দেখাতে হয়েছে।

বৃষ্টির সময় বাংলাদেশে আইসক্রীমের চাহিদা কমে যায়। ওইসময় কোম্পানির লোকসান কাটিয়ে উঠাই দূরহ হয়ে উঠে। তবে এমন বৃষ্টির মধ্যে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অস্বাভাবিক মুনাফা দেখিয়েছে একরামুল হক। যা কোম্পানিটির আগের যেকোন সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। অথচ এ সময় বাংলাদেশে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। পুরোটা প্রান্তিকই ছিল বৃষ্টিপাত। অনেকটা বর্ষাকাল পার করেছে বাংলাদেশ।

একরামুলের নেতৃত্বাধীন চক্র লাভেলোর শেয়ার কারসাজি শুরু করে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এজন্য তারা ওই সময় থেকে কৃত্রিম আর্থিক হিসাব প্রকাশ করে আসছে। যে কারন বছর শেষে গিয়ে ওই আর্থিক হিসাব সমন্বয় করতে হয়েছে।

এসিব বিষয়ে জানতে লাভেলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুল হক ও সচিব মহিউদ্দিনকে যোগাযোগ করলে ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

দেখা গেছে, শেয়ার কারসাজির একরামুল হক লাভেলো আইসক্রীমের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ২ প্রান্তিকে অস্বাভাবিক বা কৃত্রিম মুনাফা দেখায়। যা শেষ ২ প্রান্তিকে সমন্বয় করতে হয়। এক্ষেত্রে সমন্বয় না করলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে জালিয়াতি উঠে আসত। কারন কোয়ার্টারলি আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা করা না লাগলেও বছর শেষে ১২ মাসের হিসাব নিরীক্ষা করতে হয়।

কোম্পানিটির ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা দেখানো হয় ০.৯১ টাকা। যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে ০.৬১ টাকা দেখানো হয়। এরপরে তৃতীয় প্রান্তিকে দেখানো হয় ০.২২ টাকা। অর্থাৎ ৯ মাসে ইপিএস দেখানো হয় ১.৭৪ টাকা। তবে বছর শেষে বা ১২ মাসে দেখানো হয়েছে ১.৬৫ টাকা। অর্থাৎ চতুর্থ প্রান্তিকে কোম্পানিটির ০.০৯ টাকা লোকসান হয়েছে।

লাভেলোর ২০২৪-২৫ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ইপিএসের তথ্য

কোম্পানির নাম

১ম প্রান্তিক

২য় প্রান্তিক

৩য় প্রান্তিক

১২ মাস

শেষ প্রান্তিক

ইপিএস (২৪-২৫)

০.৯১

০.৬১

০.২২

১.৬৫

(০.০৯)

ইপিএস (২৩-২৪)

০.৩২

০.২৫

০.৭১

১.৪৩

০.১৫

চলতি বছরের ৩ মাসে (এপ্রিল-জুন) শেয়ারপ্রতি ০.০৯ টাকা লোকসান দেখানো লাভেলো আইসক্রীমের একরামুল হক পরবর্তী ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেয়ারপ্রতি মুনাফা দেখিয়েছে ১.০২ টাকা। যা কোম্পানিটির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে যেকোন একটি প্রান্তিকের বিবেচনায় সর্বোচ্চ। অথচ ওই সময় বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং স্বাভাবিকভাবে আগের প্রান্তিকের ন্যায় কম আইসক্রীম বিক্রি হয়েছে। এতে লোকসান হওয়াই ছিল স্বাভাবিক।

কোম্পানিটির ২০২৩-২৪ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরের ইপিএসের তথ্য তুলে ধরা হল-

কোম্পানির নাম

১ম প্রান্তিক

২য় প্রান্তিক

৩য় প্রান্তিক

১২ মাস

শেষ প্রান্তিক

ইপিএস (২৩-২৪)

০.৩২

০.২৫

০.৭১

১.৪৩

০.১৫

ইপিএস (২২-২৩)

০.৫৬

০.১৭

০.৪১

১.২৪

০.১০

একরামুল হকের লাভেলো আইসক্রীম নিয়ে কারসাজির যাত্রা শুরু ২০২৪ সালের ফেব্রয়ারিতে। যে কারনে সে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ২য় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৪) দিয়ে মুনাফা বাড়িয়ে দেখানো শুরু করে। কোম্পানিটির ওই বছরের ২য় প্রান্তিকে ০.২৫ টাকা ইপিএস হয় বলে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি তথ্য প্রকাশ করে। যার পরিমাণ আগের বছরের একইসময়ে হয়েছিল ০.১৭ টাকা। এক্ষেত্রে ইপিএস বৃদ্ধি দেখানো হয় ৪৭%। অথচ বাংলাদেশে ওই সময় (অক্টোবর-ডিসেম্বর) থাকে শীতকাল।

কোম্পানির ওই আর্থিক হিসাব প্রকাশের পর শুরু হয় কারসাজি। যা চলছে এখনো। দেখা গেছে, গত বছরের ২৯ জানুয়ারি লাভেলো আইসক্রিমের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২৯.৮০ টাকা। সেখান থেকে দফায় দফায় দাম বেড়ে সাড়ে ৫ মাসের ব্যবধানে ১৫ জুলাই ১০৬.৪০ টাকায় উঠে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে ৭৬.৬০ টাকা বা ২৫৭ শতাংশ। তবে এই দর বৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক কোন কারন খুজে পায়নি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।

তবে মাকসুদ কমিশনের দায়িত্ব গ্রহনের পরে শেয়ারবাজারে বড় পতনে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমে চলতি বছরের গত ২০ এপ্রিল নেমে আসে ৮০.৬০ টাকায়। যা পরবর্তীতে বেড়ে আবারও ১০০ টাকায় উঠে আসে।

এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কারসাজির মাধ্যমে বাড়ানো ওই শেয়ারটির দর ধরে রাখার জন্য কোম্পানিটির মুনাফা ও লভ্যাংশ বাড়ায়। তারা হুট করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের ১০% থেকে বাড়িয়ে ২০% লভ্যাংশ দেয়।

২০২১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ১.৪৩ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। আর লভ্যাংশ ছিল ১২ শতাংশের মধ্যে। এসত্ত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১.৪৩ টাকা ইপিএসের বিপরীতে কোম্পানিটির পর্ষদ শেয়ারপ্রতি ২ টাকা (১ টাকা নগদ ও ১ টাকা বোনাস) লভ্যাংশ দেয়। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির ১২.১৮ কোটি টাকার নিট মুনাফা হলেও লভ্যাংশ ঘোষণা করে ১৭ কোটি টাকার। এর অন্যতম কারন কোম্পানিটির কারসাজির মাধ্যমে লাভেলোর ৩০ টাকার শেয়ারটিকে যে ১০০ টাকায় তুলে নেওয়া হয়েছিল, তা ধরে রাখার চেষ্টা করা।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে